এই সমকামী ব্যক্তির মাধ্যমেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তি হয়! - আমার বাংলা নিউজ ২৪x৭

খবর ও লেখা সকলের জন্যে

ব্রেকিং

Home Top Ad

Post Top Ad

বুধবার, ২ জুন, ২০২১

এই সমকামী ব্যক্তির মাধ্যমেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তি হয়!

এই সমকামী ব্যক্তির মাধ্যমেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তি হয়!

টিউরিংয়ের এই চিন্তার আগেই পোল্যান্ডের একদল কোড ব্রেকার এমন একটি মেশিন বানানোর চিন্তা করেছিলেন। অ্যালান টিউরিং তাদের সেই ধারণাকে আরও উন্নত করে হাজার গুণ শক্তিশালী একটি মেশিন তৈরি করলেন। এই মেশিনের নাম তিনি দিলেন ‘বোম্বে। তবে বোম্বে মেশিনের কার্যকারিতা ছিল বেশ ধীরগতির। দ্রুত এনিগমা ব্রেক করার জন্য তখন দরকার পড়েছিল অনেকগুলো বোম্বের একসঙ্গে কাজ করার। এজন্য টিউরিংয়ের দলের প্রচুর অর্থ বরাদ্দের দরকার পড়েছিল। ‘দ্য ইমিটেশন গেম সিনামাতে টিউরিং চরিত্রের অভিনেতা এদিকে, দীর্ঘদিন ব্যর্থ থাকার কারণে হাট-০৮ এর সেই কোড ব্রেকারদের ওপর ব্রিটিশ মিলিটারি যারপরনাই বিরক্ত হয়ে পড়েছিল। তাই তারা টিউরিংকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দিতে রাজি হলো না। এমতাবস্থায় টিউরিং তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলকে তার আবিষ্কৃত বোম্বে মেশিনের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করে চিঠি লেখেন ও এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য দেয়ার অনুরোধ করেন। টিউরিংয়ের প্রোজেক্টের গুরুত্ব অনুধাবন করে চার্চিল তৎক্ষণাৎ মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সকে নির্দেশ দিলেন, টিউরিংয়ের যা যা প্রয়োজন তা যেন তাকে সরবরাহ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় টিউরিং তার বোম্বে মেশিনের কাজ এগিয়ে নিতে থাকলেন। একের পর এক নতুন নতুন বোম্বে মেশিন তৈরি করতে লাগলো টিউরিংয়ের দল। অনেকগুলো বোম্বে একসঙ্গে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে এনিগমার একটা প্যাটার্ন বের করে ফেলল। তবে এনিগমা ব্রেক করেই টিউরিংয়ের কাজ সমাপ্ত হলো না। ব্রিটিশরা জার্মানদের একের পর এক এনিগমা কোড ডিকোড করে যদি সেই অনুযায়ী অ্যাকশন নেয়া শুরু করত তবে জার্মানরা টের পেয়ে যেত যে ব্রিটিশরা এনিগমা ব্রেক করতে সক্ষম হয়েছে।

টিউরিং ও তার এনিগমা মেশিন

তখন জার্মানরা এনিগমা ব্যবহার বন্ধ করে দিতো ও নতুন যোগাযোগ পন্থা অবলম্বন করত। সুতরাং, জার্মানদের কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না যে ব্রিটিশরা তাদের এনিগমা ধরে ফেলেছে! এ কারণেই এক ভয়াবহ পথ বেছে নিলেন টিউরিং। তিনি এনিগমা থেকে প্রাপ্ত জার্মানদের সব আক্রমণের পূর্ব পরিকল্পনা ব্রিটিশ মিলিটারির হাতে দিতেন না। শুধু নির্বাচিত কিছু আক্রমণের পূর্ব পরিকল্পনাই ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে তুলে ধরা হতো এবং ব্রিটিশরা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিত। অনেক সময় দেখা যেত, টিউরিং একটি আক্রমণের সম্ভাবনা টের পেয়েছেন; তিনি জানতে পারলেন সেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে; তারপরও তিনি চুপ থাকতেন। কারণ ওই যে, জার্মানদের সব আক্রমণ ঠেকিয়ে দিলে তারা টের পেয়ে যাবে এনিগমা ব্রেকের কথা। টিউরিংয়ের এই কাজের জন্য অনেকেই তাকে ঠাণ্ডা মাথার দানব বলে আখ্যায়িত করত। তবে এরকম মনে করা অমূলক, কারণ এই মানুষটির কৃতিত্বেই রক্তক্ষয়ী দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ কমপক্ষে ২ বছর আগে শেষ হয়েছে, বেঁচে গেছে প্রায় দেড় কোটি মানুষের প্রাণ! যুদ্ধ থেমে গেলে টিউরিং বেশ কিছুদিন ক্রিপ্টোগ্রাফি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করেন। টিউরিং তার বিখ্যাত গবেষণা প্রবন্ধ ‘দ্য ইমিটেশন গেমএ দ্য টিউরিং টেস্ট এর কথা ব্যক্ত করেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একটি সত্ত্বা মানুষ নাকি রোবট তা বের করা সম্ভব হতো! গুণী এই গণিতবিদের শেষ পরিণতি কিন্তু মোটেই সুখকর ছিল না। সমকামিতাই তাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। তখনকার ইংল্যান্ডে সমকামিতা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অ্যাপলের লোগোতে আধ কামড় আপেলের প্রতিকৃতি টিউরিংয়ের অনুপ্রেরণাতেই টিউরিংয়ের বাসায় একদিন চুরি হলে পুলিশ তার বাসায় তদন্ত করতে গিয়ে তার সমকামিতার ব্যাপারটি আঁচ করতে পারে।

পরে তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত তাকে দুটি পথের একটি বেছে নিতে বলে - হয় তাকে কারাবাস করতে হবে নয়তো নপুংসক হতে হবে। টিউরিং দ্বিতীয় শাস্তিটা বেছে নেন। অপারেশন করে তার যৌন ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়। এই অপারেশনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তার মনে রাজ্যের হতাশা ভর করে। ফলে ১৯৫৪ সালের ৭ জুন সায়ানাইড মেশানো আপেল খেয়ে আত্মহত্যা করেন অ্যালান টিউরিং। ২০০৯ সালে এক পাবলিক পিটিশনের জের ধরে টিউরিংসহ যেসব মানুষ সমকামিতার জন্য শাস্তি পেয়েছেন তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করে দেয় ব্রিটিশ রাজপরিবার। বিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের লোগোতে যে কামড় দেয়া আপেলের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও টিউরিংয়ের সেই হৃদয়বিদারক আত্মহত্যার কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত।

খবর ও ছবি: সংগৃহীত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad