যেভাবে নিজের মৃত্যু ডেকে আনলো তারা নিজেরাই! - আমার বাংলা নিউজ ২৪x৭

খবর ও লেখা সকলের জন্যে

ব্রেকিং

Home Top Ad

Post Top Ad

বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১

যেভাবে নিজের মৃত্যু ডেকে আনলো তারা নিজেরাই!

 নিজের মৃত্যু ডেকে আনলো তারা নিজেরাই!

নিজের বানানো ওষুধ খেয়ে ডা. জেকিল ভয়ানক দানব হাইডে পরিণত হতেন এবং কুকর্ম করতেন। সেই ওষুধেই তার মৃত্যু হয়। ‘ড. জেকিল অ্যান্ড মি হাইড-এর গল্পটা নিশ্চয় আপনাদের জানা!

এটা গল্প হলেও বাস্তবে একই রকম অনেক ঘটনা আছে, যা জানলে অবাক হয়ে যাবেন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন এমন অনেক বিজ্ঞানী রয়েছেন, যাদের মৃত্যুর কারণ তাদেরই নিজেদেরই আবিষ্কার। এরকমই কিছু মানুষের খোঁজ রইলো-

 

টমাস অ্যান্ড্রু

তিনি ছিলেন আর.এম.এস. টাইটানিকের প্রধান নৌ স্থপতিদের একজন। টাইটানিকের প্রথম যাত্রাতেও তিনি জাহাজটিতে স্থান পেয়েছিলেন। অ্যান্ড্রু টাইটানিকের ভঙ্গুরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাই তিনি জাহাজটির খোলস দুই স্তরে করার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং এতে ২০টির বদলে ৪৬টি লাইফ বোট রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু খরচ কমানোর অজুহাতে তার কথায় কান দেওয়া হয়নি। ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল যখন টাইটানিক ভাসমান বরফখণ্ডে আঘাতের পর ডুবে যাচ্ছিল তখন তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেককেই বাঁচিয়েছেন। তাকে সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির একটি কামরায় বসে ধুমপানরত অবস্থায় কাঁদতে দেখা গিয়েছে। তার মৃতদেহ আর কখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

 

নিজের বানানো গাড়ির দূর্ঘটনায় নিহত স্ট্যানলি

দাড়িয়ে আছেন ফ্র্যান্সিস এডগার স্ট্যানলি ও তার গাড়ি

ফ্র্যান্সিস এডগার স্ট্যানলি এবং তার যমজ ভাই ১৮৯৬ সালে আবিষ্কার করেন স্ট্যানলি স্টিমার অটোমোবাইল। ১৯০৬ সালে তারা ১৯০৬ মাইল মাত্র ২৮ সেকেন্ডে পার করে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন। তাদের গাড়ির গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১২৭ মাইল। ১৯১৮ সালে, স্ট্যানলি মোটর বিক্রি করে দেন দুই ভাই। সেই একই বছরে ফ্র্যান্সিস এক দিন মনের আনন্দে তারই আবিষ্কার করা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। হঠাত্‍ সামনে কিছু একটা দেখতে পান। সেটাকে এড়াতে গাড়িকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন। এর ফলে গাড়ি গিয়ে সোজা ধাক্কা মারে সামনে পড়ে থাকে কাঠের তক্তার ওপর। অতঃপর, গাড়ি পুরো উল্টে পাল্টে যায়। মৃত্যু হয় ফ্র্যান্সিসের।

 

সিলভেস্টার এইচ. রোপার

তিনি বিশ্বের প্রথম মটরসাইকেল আবিষ্কার করেন। সেটি ছিল মূলত একটি রুপান্তরিত বাইসাইকেল। যা বাষ্পচালিত ইঞ্জিনে চলত। ১৮৯৬ সালের ১ জুন রোপ মেশিনটি পরীক্ষা করছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যান।

 

হট এয়ার বেলুনে মৃত্যু রোসিয়ের

জন ফ্রানসোয়াজ পিলোট্রো দো রোসিয়ে প্রথম মানুষ ছিলেন যিনি হট এয়ার বেলুন চড়তে স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছিলেন। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জনপ্রিয় হওয়ার তাগিদে তিনি এই প্রস্তাব নাকচ করেননি। ১৭৮৩ সালে প্রথম হট এয়ার বেলুন চড়ার সুবাদে সে তারকা বনে যান। পরবর্তীকালে আরও দুজন হট এয়ার বেলুন চড়ে ইংলিশ চ্যানেল পার করায়, তার জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও কমে যায়। হিংসায় জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যান রোসিয়ে। আর তার হারিয়ে যাওয়া জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করতে তৈরি করে ফেলেন রোসিয়ে বেলুন। আগের বেলুনগুলোর চেয়ে অনেক উন্নত ছিল তার এই বেলুন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ইংলিশ চ্যানেল পার করার সময় সেই বেলুনেই তার মৃত্যু হয়। তবে এর কারণ এখনো রহস্যই রয়ে গেছে।

 

নিজের তৈরি প্রিন্টিং মেশিনে পা আটকে যায় উইলিয়াম বুলকের

উইলিয়াম বুলক ও তার প্রিন্টিং মেশিন

উইলিয়াম বুলক রোটারি প্রিন্টিং মেশিনের উন্নত সংস্করণ বানান ১৮৩৬ সালে। আধুনিক খবরের কাগজের প্রথম প্রিন্টিং প্রেস বলতে এখনো এই মেশিনকেই বোঝানো হয়। ১৮৬৭ সালে মেশিন চালানোর সময় হঠাত্‍ করেই তার পা মেশিনের গিয়ারের মাঝখানে আটকে যায়। তারপর সঠিক চিকিত্‍সার অভাবে পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে যায়। পা কেটে বাদ দেয়ার সময় অপারেশন টেবিলেই মারা যান উইলিয়াম বুলক।

 

ম্যাক্স ভ্যালিয়ের

ম্যাক্স ভ্যালিয়ের তার রকেটে বসে আছেন

তিনি ছিলেন একজন অস্ট্রিয়ান রকেট বিজ্ঞানী। যিনি কঠিন এবং তরল জ্বালানির মিসাইল আবিষ্কার করেন। এই সাফল্য দেখে তিনি ভাবেন তিনি হয়তো এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে রকেটচালিত গাড়িও বানাতে পারবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। তিনি ঘন্টায় ২৫০ মাইল গতির গাড়িও উদ্ভাবন করেন। এরপর তিনি অ্যালকোহলকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্যও গবেষণা করেন। কিন্তু ওই গবেষণা করতে গিয়েই বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনি মারা যান এবং তার ওয়ার্কশপটিও পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

 

জগিং-এর পৃষ্ঠপোষক জিম মারা গেছিলেন জগিং করার সময়

জগিং-এর পৃষ্ঠপোষক জিম

জগিংকে জনপ্রিয় করেছিলেন জেমস জিম ফিক্স। ফিটনেসের ওপর প্রচুর বই লিখেছেন তিনি। ‘দ্য কমপ্লিট বুক অব রানিং বইটিও তারই লেখা। তিনি জগিং শুরু করেছিলেন সুস্থ থাকার জন্য। তার পিতার ৩৫ বছর বয়সে হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে এবং মাত্র ৪৩ বছরেই সে মারা যায়। জিম ফিট থাকতে চাইতেন, যাতে তার পিতার মতো তাকে ভুগতে না হয়। কিন্তু কী আশ্চর্যভাবে একদিন সকালে জগিং করার সময়ই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান জিম। একেই বোধহয় বলে ‘ম্যান প্রোপোসেস, গড ডিসপোসেস!’

 

হাল ও হেনরির উড়ন্ত গাড়ি

 

হেনরি স্মোলিঙ্কস্কি এবং হাল ব্লেক ‘এভিই মিজার নামের একটি ফ্লায়িং কার বানিয়েছিলেন। এই যানটির আবার ডানা আলাদাভাবে খোলা যেত। তারা ভেবেছিলেন এই যানটি হেলিকপ্টারের ছোট সংস্করণ হিসেবে দারুণভাবে ব্যবহার করা যাবে। ছোটখাটো দূরত্ব অনায়াসে পাড় করে দিতে পারবে। এয়ারপোর্ট থেকে হেলিকপ্টারের মতোই ছাড়বে। আবার অন্য জায়গার এয়ারপোর্টে এসে ল্যান্ডিং করবে। তারপর ডানা খুলে গাড়ির মতো এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে যাবে। প্ল্যানিং-এর দিক থেকে কোনো অসুবিধে ছিল না। কিন্তু গোল বাঁধল উড়ন্ত গাড়িটি পরীক্ষা করার সময়। টেস্ট রান চলার মধ্যেই গাড়ির ডানাগুলো খুলে পড়ে যায় এবং মৃত্যু হয় দুই আবিষ্কারকের।

 

হোরেস লসন হানলে

হোরেস লসন হানলের সাবমেরিন

হোরেস লসন হানলে ছিলেন একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি সর্বপ্রথম কমব্যাট সাবম্যারিন আবিষ্কার করেন, সেটির নাম সিএসএস হানলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ১৮৬৩ সালে একবার সাবম্যারিনটির যান্ত্রিক সমস্যা হয়, এটি আর ভেসে উঠতে পারছিল না, তখন তিনি এটি টেস্ট করতে যান এবং সাতজন ক্রু মেম্বারসহ ডুবে মরেন।

 

মেরি কুরি

রসায়ন শাস্ত্রে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য দুই বার নোবেল পুরস্কার জয় করেন এই বিদুষী নারী মেরি কুরি। তেজস্ক্রিয়তার ময়দানে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বিষয়ে প্রথম মৃত্তিকাখনক বা পথপ্রবর্তক ছিলেন পোল্যান্ডের বংশোদ্ভুত এই ফরাসি নাগরিক। তার আবিষ্কৃত সূত্রের বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানেও নানাবিধ ব্যবহার হয়ে থাকে। তিনি হচ্ছেন নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি দুইবার নোবেল পুরস্কার জয় করেন। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে এসে এই মহিয়সী নারী আবিষ্কারের নেশায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সোপর্দ করেন গবেষণার কাজে। দিনরাত বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভুলে যান নিজের দেহ ও স্বাস্থ্যের কথা। এইভাবে নিজের শরীরকে অবজ্ঞা করার কারণে কোনো একসময় তার দেহে বাসা বাধে মরণঘাতী রোগ। আর তেজষ্ক্রিয় রশ্মির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় দুই চোখের জ্যোতি হারিয়ে হয়ে যান সম্পূর্ণ অন্ধ। অবশেষে ১৯৩৪ সালে এই ক্ষণজন্মা নারী মৃত্যু বরণ করেন।

খবর ও ছবি: সংগৃহীত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad