যে মাছ উড়তে পারে
সাগরের নীল
জলরাশির উপর ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ এদিক ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। শিকারের উদ্দেশ্যে টোপ ফেলতেই
হিংস্র গতিতে ছুটে আসছে আপনার দিকে। নাহ, এটা কোন ভৌতিক ছবির কাহিনী না। বাস্তবেও এমন
কিছু মাছ আছে আমাদের এই পৃথিবীতে যাদের উড়ন্ত মাছ বা ফ্লাইং ফিস বলা হয়। এরা পাখির
মত উড়তে না পারলেও জলের উপর বেশ লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। শত্রুর হাত থেকে মুক্তি পাবার
জন্য তারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করে। পৃথিবীর অনেক জায়গায় ফ্লাইং ফিস ‘ফ্লাইং কড’ নামেও পরিচিত। এরা অ্যাক্সোকোয়িটাইড গোত্রের। অ্যাক্সোকোয়িটাইড
শব্দটি গ্রিক অ্যাক্সোকোয়িটাস শব্দ থেকে এসেছে। শব্দটি প্রাচীন গ্রীসে এমন সব প্রাণীদের
ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো যারা বাসস্থানের বাইরে ঘুমায়। প্রাচীনকালে মাছের এই উড়ার
ক্ষমতার কারণে মনে করা হতো- এই মাছ সারাদিন পানিতে বিচরণ করলেও রাতে ঘুমানোর জন্য তীরে
উড়ে যায়।
এই গোত্রের
মাছগুলো একটু ভিন্ন। এদের শারীরিক গড়নও সাধারণ মাছের থেকে আলাদা। অন্যান্য মাছের ন্যায়
এদের পাখনা থাকলেও তা অনেকটা পাখির ডানার মতো। এদের পৃষ্ঠদেশ স্ট্রিমলাইনড টর্পেডো
আকৃতির এবং জোড়া লাগানো। এছাড়া এই মাছের বক্ষ-পাখনা থাকে অনেক বড় যা তাদের বাতাসে ভেসে
থাকতে সহয়তা করে। এখন পর্যন্ত ৪০ প্রজাতির উড়ন্ত মাছ সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে
অনেকে আবার ‘four-winged flying fish’ নামেও পরিচিত। ফ্লাইং ফিস ৪ ফুট থেকে ৬৫৫ ফুট
পর্যন্ত উড়তে পারে এবং তাদের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কি.মি পর্যন্ত হয়। এদের মধ্যে একটি
প্রজাতি ১৩১২ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠতে পারে।
মাছটির উড়ে
বেড়ানোর পদ্ধতিটাও বেশ চমত্কার। প্রথমে মাছটি সাগরের পৃষ্ঠে লাফ দিয়ে ওঠে। তারপর
মাত্র এক সেকেন্ডে ৭০ বার সাগরের পৃষ্ঠে লেজ নাড়িয়ে অগ্রসর হতে থাকে, তারপর পাখির
মত ডানা মেলে দেয়। এই ডানা তাদের উচ্চতা লাভে সাহায্য করে। এদের ওড়ার মূল রহস্য হচ্ছে,
এই মাছের বক্ষ-পাখনা থাকে অনেক বড় যা ডানা বা পাখার মত কাজ করে আর সাহায্য করে জলের
উপরে উড়ে বা লাফিয়ে চলতে। কোনো কোনো প্রজাতির শ্রেণি-পাখনা অথবা পায়ু-পাখনাও অনেক
বড় হয়। এদের লেজ বা পুচ্ছ পাখনাও অনেক বড় ও শক্ত যা দিয়ে এরা জলেতে আঘাত করে উড়ার
গতিশক্তি লাভ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন